Advertisment

The effects of the corona virus on the world economy

বিশ্ব অর্থনীতিতে কাঁপন ধরিয়েছে করোনা ভাইরাস। ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যটন ক্ষেত্রে চীন যেমন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তেমনি এর প্রভাব পড়ছে বহু দেশেই।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রাদুর্ভাব দৃশ্যমান। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও ভ্রমণকেন্দ্রিক যোগাযোগের পরিসর অনেক বড়।

চীন থেকে বছরে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।
করোনা ভাইরাসের কারণে চীন থেকে পণ্য জাহাজীকরণ, বুকিং এবং বিক্রি আপাতত বন্ধ রয়েছে। যেসব পণ্য দেশে আসছে সেগুলো এক মাস আগেই বুকিং করা। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে আকাশপথে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও চীনের নাগরিকদের আগমনী ভিসা বন্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পণ্যের কাঁচামাল আমদানির সঙ্কট দেখা দিলে রফতানিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ চীনের বদলে বিকল্প দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানির খোঁজখবর নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এ পরিস্থিতিতে চীনের বিকল্প বাজার ক্রেতাদের হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথাও বলছেন এবং এর জন্য প্রস্তুতির তাগিদ দিয়েছেন। চায়না বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এটি ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই সম্ভাবনায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন মৃধা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই রকম বিপর্যয়ে সবার আগে মানুষের জীবন। এ ক্ষেত্রে চীন কোন ঝুঁকি নিতে রাজি না। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের রফতানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সেটার জন্য আমাদের আমদানিতেও একটা বড় প্রভাব পড়বে।
 বাংলাদেশে চীনা অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় অবকাঠামো উন্নয়নের বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে বাধা তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কাক্সিক্ষত সময়ে কাজ না এগোলে বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়ও। চৈনিক নববর্ষে যোগ দিতে গিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত অনেক চীনা আটকে পড়েছেন। ফলে মেগা প্রকল্পে সময় ও ব্যয় উভয়ই বাড়বে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, ‘এমনিতেই আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা নেই। তার ওপর চীনা সহায়তার বড় প্রকল্পে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা আটকে পড়লে সেটা দুশ্চিন্তারই কারণ। আর সময়মতো কাজ না এগোলে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে বা বাড়ানোর অজুহাত তোলা হতে পারে। কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি প্রকল্পে কর্মরত চীনের শতাধিক কর্মকর্তা তাঁদের ছুটি আরও বাড়িয়েছেন।’ পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্র্র্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের নাগরিকরা বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত আছেন। এসব প্রকল্পে দেড় হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। তার বাইরে আরও কিছু প্রকল্পে ৫০০ চীনা নাগরিক সহায়তা করছেন। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে যুক্ত ৩৫ চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস বলছে, অর্থনৈতিকভাবে আরও একটি দুর্বল বছর হতে যাচ্ছে ২০২০ সাল।

বিশ্বব্যাংক আশা করছে, বৈশ্বিক উৎপাদন গত বছরের ২ দশমিক ৪ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি বছরে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক উৎপাদন ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। একইভাবে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের মতে, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সুস্থির থাকলেও তেমন অসাধারণ কোন কিছু ঘটবে না। গ্লোবাল ম্যাক্রো রিসার্চের পরিচালক বেন মে জানান, সীমিত বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা, ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপ এবং সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি নীতি নির্ধারকদের সমস্যায় ফেলবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তাদের নেয়া উদ্যোগের সুফলগুলোয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চীনের কথা। দেশটির অর্থনীতি দিন দিন মন্থর হয়ে পড়ছে। তার ওপর নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে অভাবনীয় অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশ। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বন্ধ রয়েছে দেশী ও আন্তর্জাতিক বহু কোম্পানির কারখানা। চীনে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা জারি করেছে বহু দেশ। এ অবস্থায় ২০২০ সালে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত ৩০ বছরে কখনই হয়নি। একইভাবে মন্থরতা দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও। পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের বেশি সম্প্রসারণ করতে কষ্ট করতে হবে ইউরোপের বেশকিছু দেশকে।
এছাড়া উদীয়মান বড় অর্থনৈতিক দেশগুলোর জন্য সাম্প্রতিক সময়ে তেমন ভাল কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে বড় ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ছিল ভারত। ওই বছর দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক গত বছর দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল মাত্র ৫ শতাংশ। একইভাবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সীমাবদ্ধ ঋণপ্রবৃদ্ধি ও ভোক্তা ব্যয়ের কারণে এ বছরও দেশটির জিডিপির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
 

Post a Comment

Leave with comments

Previous Post Next Post

Advertisement

Advertisement